গুপ্তোত্তর যুগের ইতিহাস | Post Gupta Era | Ancient Indian History

 Post Gupta Period | Ancient Indian History

গুপ্তোত্তর যুগ | গুপ্তোত্তর পর্ব

www.gkghor.in
Ancient Indian History | Post Gupta Period | Indian History | History Question Answer


 ➤গুপ্প্তোত্তর পর্ব :

  গুপ্তোত্তর পর্বে উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের কতিপয় রাজশক্তি আত্মপ্রকাশ করে। এই পর্বের রাজ্যগুলির মধ্যে পূর্ব মালবের উত্তরকালীন গুপ্ত, কন্যকুব্জ এর মৌখরি, গৌড়, কামরূপের বর্মা, পুষ্যভূতি ও বলভীর রাজবংশ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

 

উত্তরকালীন গুপ্ত রাজবংশ :

বংশ পরিচয়-

উত্তর কালীন গুপ্ত লেখমালায় রাজাদের বংশ পরিচয় সম্পর্কে কোন তথ্য পরিবেশিত হয়নি। এই রাজবংশী এক অধঃস্তন পুরুষ | আদিত্য সেনের আফসর অভিলেখে এই বংশকে সদবংশ বলে অভিহিত করা হয়েছে। পূর্বতন গুপ্ত রাজাদের অনুকরণে তারাও কুমার গুপ্ত, দেবগুপ্ত, বিষ্ণুগুপ্ত, ইত্যাদি নাম ধারণ করেছেন।


প্রতিষ্ঠা-কাল :

উত্তরকালীন গুপ্ত রাজবংশের চতুর্থ নৃপতি কুমার গুপ্ত। তিনি ছিলেন মৌখরী রাজ ইশান বর্মার সমকালীন। ৫৫৪ খ্রিস্টাব্দে ঈশান বর্মার হরহা লেখ উত্তীর্ণ হয়। অনুমিত হয় আনুমানিক ৫০০ খ্রিষ্টাব্দ উত্তরকালীন গুপ্ত রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বংশের প্রথম রাজা কৃষ্ণগুপ্ত ।

 

আদি রাজ্য :

উত্তরকালীন গুপ্ত রাজাদের আদি রাজ্য মগধে অবস্থিত ছিল। আজ পর্যন্ত এই বংশের আদি রাজাদের কোন অভিলেখ এর সন্ধান পাওয়া যায়নি। উত্তরকালীন গুপ্ত ও ঔলিকররা মালবের একই অঞ্চলে রাজত্ব করেননি। উত্তরকালীন গুপ্তরা রাজত্ব করেছেন মালবের এরান বিদিশা অঞ্চলে, ঔলিকররা উজ্জয়িনী মন্দসৌর ভূখণ্ডে। অবন্তী ও মালব নামে দুটি স্বতন্ত্র জনপদের উল্লেখ আছে বানভট্টের কাদম্বরী কাব্য।


কৃষ্ণগুপ্ত ও  হর্ষগুপ্ত

উত্তরকালীন গুপ্ত রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণগুপ্ত। তার সদ বংশে জন্ম। তিনি  সাধারণ সম্ভবত মগদের পূর্বতন গুপ্ত রাজাদের অধীনস্থ ছিলেন। কৃষ্ণগুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র হর্ষগুপ্ত পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। প্রথমদিকে মৌখরী ও উত্তরকালীন গুপ্ত রাজপরিবারের মধ্যে প্রতি পূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।


প্রথম জীবিতগুপ্ত :

আফসার লেখে তাকে "ক্ষিতীশচূড়ামণি" বলে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম জিবীতগুপ্তের ভয়ে সমুদ্রতীরবাসি ও হিমালয়ের পাদদেশস্ত শত্রুরা সদা শঙ্কিত ছিলেন। রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন সমকালীন গুপ্ত সম্রাট এসব সামরিক অভিযানের প্রকৃত নায়ক ছিলেন জীবিতগুপ্ত তাকে সহযোগিতা করেন। জীবিতগুপ্ত সম্ভবত  যশোধর্মের  আনুগত্য স্বীকার করেন।


প্রথম কুমারগুপ্ত ও দামোদরগুপ্ত :

যশোধর্মের মৃত্যুর পর ঔলিকর রাজ শক্তির দূর্বলতার সুযোগে আনুমানিক ৫৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বাধীন উত্তরকালীন গুপ্ত রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। সমকালীন রাজা ঈশান বর্মা উচ্চাভিলাষী রাজা ছিলেন। প্রশস্তিকার কুমার গুপ্তের জয়লাভ কে দেবতাদের সমুদ্রমন্থনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তার রাজ্য এলাহাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আফসর লেখে দামোদরগুপ্তের বীরত্বব্যঞ্জক কার্যকলাপ সম্পর্কে লেখা আছে।  তিনি মৌখরীরাজ কে পরাজিত করেন। দামোদর গুপ্তের হস্তে পরাজিত মৌখরী নৃপতি  ইশান শর্মা। দামোদর গুপ্ত ঈশান বর্মার বিরুদ্ধে তার বিজয়কে রাজ্য বিস্তারের দুরহ কাজে রূপায়িত করতে পারেননি।

 

মহাসেনগুপ্ত :

মহাসেনগুপ্ত কামরূপ রাজ সুস্থিতবর্মাকে পরাজিত করেন। মহাসেনগুপ্তের বিজয় গৌরব ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় কৃতিত্ব হচ্ছিল। রমেশচন্দ্র মজুমদার অভিমত ব্যক্ত করেছেন একটি বিপর্যের ঢেউ মহাসেন গুপ্তকে গ্রাস করে। তিব্বতের রাজার মধ্য ভারত আক্রমণ সেন গুপ্তের দিগ্বিজয়ের পথ উন্মুক্ত করে। আনুমানিক ৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে ভাস্করবর্মা নামে জৈনিক রাজনৈতিক ভাগ্যান্বেষী ঔলিকরদের পরাজিত করে পশ্চিম মালব অধিকার করেন। রাজপদে অভিষিক্ত হন কুমার বর্মা। মহাসেনগুপ্তের জীবনের শেষ দিনগুলি সুখকর হয়নি।


কান্যকুব্জর মৌখরী রাজবংশ

মৌখরী রাজবংশ গুপ্তত্তর উত্তর ভারতের বিশেষ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই মৌখরী বংশ কান্যকুব্জ এর মৌখরী রাজবংশ রূপে ভারতের ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। মুখর শব্দ থেকে মৌখরি পদের উদ্ভব হয়েছে। গয়া শহরের নিকটবর্তী বরাবর নাগার্জুনের উৎকীর্ণ তিন খানি পুরুষের এক মৌখরী সামন্ত পরিবারের উল্লেখ আছে। 

 

মহারাজাধিরাজ ইশানবর্মা :

ক্ষুদ্র, সামন্ত মৌখরী রাজ্যটিকে যিনি এক স্বাধীন, সার্বভৌম, বৃহৎ রাষ্ট্রে পরিণত করেন তিনি ঈশান বর্মা। মৌখরী রাজ বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি তিনি। উত্তরকালীন গুপ্ত রাজ পরিবারের সঙ্গে মৌখরীদের প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল | ঈশান বর্মার রাজত্বকালে তার অবসান হয়। মগধ যে ঈশান বর্মার অধিকারভুক্ত ছিল সিরপুর লেখে তা প্রমাণিত। নালন্দায় প্রাপ্ত একটি সিলমোহরে অবন্তী বর্মার পুত্রের উল্লেখ আছে। মহারাজাধিরাজ সুব বা সুচের উচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে থেকে মৌখরী রাজ-গনের চিরবিদায় ঘুচলো না।

 

গুজরাতের মৈত্রক রাজবংশ

এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ভট্টাক। তিনি প্রথম বুধগুপ্তের সমর বিভাগের একজন সেনা দক্ষ ছিলেন। গুজরাট প্রকৃত অর্থেই এক স্বাধীন রাজ্য রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। ৫২৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাহুবলে রাজপথ অর্জন করেছেন। চীনা পরিব্রাজক হিয়েন সাঙ ৬৬০ খ্রিস্টাব্দে ম- ল-পো  পরিদর্শনে আসেন। তিনি মালধি প্রতি শিলাদিত্যের কথা বলেছেন।।


কামরূপের বর্মা রাজবংশ :

মহারাজ পুশ্যবর্মা খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের মধ্যভাগে কামরূপ বা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় এক ক্ষুদ্র বর্মা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। বর্মা রাজারা অসুর নরকের বংশোদ্ভূত বলে আত্ম পরিচয় দিয়েছেন। নারায়ণ বর্মার পুত্র মহারাজ সিংহাসন আরোহণের সঙ্গে সঙ্গে বর্মা রাজ্যের প্রকৃত অভ্যুত্থান শুরু হয়। ভাস্কর বর্মার নিদনপুর তাম্রশাসন থেকে জানা যায় ভট্টি বর্মা শ্রীহট্টের কিছু জমি দিশতাধিক ব্রাহ্মণ কে প্রদান করেন। মূল তাম্রশাসন বিনষ্ট হওয়ায় ভাস্কর বর্মা পূর্বতন গ্রহীতার উত্তরপুরুষের অনুকূলে নতুন একখানি তাম্রশাসন প্রদান করেন। কামরূপের ধন-সম্পদ আরোহণের উদ্দেশ্যেই মহাসেনগুপ্ত কামরূপ জয় উদ্বুদ্ধ হন।


ওড়িষার কতিপয় আঞ্চলিক রাজবংশ :

৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে ওরিষায় গুপ্ত আধিপত্য বিরাজমান ছিল। পৃথিবী বিগ্রহ যখন গুপ্ত রাজ্যভুক্ত কলিঙ্গ রাষ্ট্রের প্রশাসক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তখন তার অধীনস্থ মহারাজ ধর্মরাজের নিকটস্থ পদ্মখোলিতে রাজত্ব করতেন। ৬০৩ খ্রিস্টাব্দে পূর্বে মহারাজ শম্ভুযশ বিদ্রোহ বা তার উত্তরাধিকারীদের পরাজিত করে স্বাধীন বিগ্রহ রাজ্যের অবসান ঘটান।

 

মান রাজবংশ :

খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ওড়িশার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মান রাজবংশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। মহারাজ শম্ভুযশ মান রাজবংশের একমাত্র রাজা ছিলেন। মহারাজ শম্ভুযশ সর্বপ্রথম উত্তর তোসলীতে  নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। মান রাজ্য শীঘ্রই গৌড়েশ্বর শশাঙ্কের অধিকার ভুক্ত হয়। 

শৈলদ্ভব রাজবংশ :  

খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের তৃতীয় পাদে গঞ্জাম অঞ্চলে এক নতুন রাজবংশের উদ্ভব হয়। শৈলদ্ভব রাজবংশ নামে পরিচিত। রণভীত এই বংশের প্রথম রাজা। গুপ্ত শাসনের অবসাননে বিগ্রহরাজ শক্তির পরাক্রমশালী হয়ে উঠলে প্রথম মাধবরাজ বিদ্রোহ আনুগত্য স্বীকার করেন। প্রথম মাধবরাজের পুত্র অযশোভিত এই বংশের তৃতীয় মহারাজ।

  

পুষ্যভূতি রাজবংশ :  

এই রাজবংশ প্রতিষ্ঠা তার নামানুসারে পুষ্যভূতি রাজবংশ নামে খ্যাত। এই বংশের রাজা স্থানেশ্বর। অধ্যাপিকা দেবাহুতির অভিমত পুষ্পভূতী সম্ভবত একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তি ছিলেন। পুষ্পভূতী বীর বিক্রমে শত্রু সৈন্যদের আক্রমণ করেন। পুষ্পভূতী সম্ভবত মথুরার এক নাগরাজাকে পরাজিত করে সে অঞ্চলে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। 


মহারাজাধিরাজ প্রভাকর বর্ধন

হূন আক্রমণের বিরুদ্ধে তিনি জয়লাভ করে শতুদ্র অববাহিকা অঞ্চলে রাজত্ব করেন। তিনি সিন্ধু শতুদ্র সঙ্গম থেকে আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডের অধিপতি ছিলেন। প্রভাকর বর্ধন তাঁর রাজত্বের শেষের দিকে দেবগুপ্ত সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দেবগুপ্ত উত্তরকালীন গুপ্ত রাজপরিবারের  এক সদস্য।


👉 গুপ্ত যুগের ইতিহাস। Gupta Dynasty


👉মৌর্য সাম্রাজ্যের ইতিহাস

Post a Comment

0 Comments