সঙ্গম যুগ | Sangam Period | Ancient Indian History

 Sangam Age | Ancient Indian Indian History



Sangam Age


Ancient Indian History | Indian History Question Answer | Sangam Period


সঙ্গম যুগের সাহিত্য ও ইতিহাস   

সঙ্গম যুগ (Sangama Age) :

দক্ষিণ ভারতের বিশেষত তামিলনাড়ুর ইতিহাসে শঙ্গম যুগ এক উজ্জ্বল পর্ব রূপে চিহ্নিত। এইসময় শুধু যে চোল সাহিত্যের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছিল তা নয়, আর্য ও স্থানীয় সংস্কৃতি মিলনে সমান্বিত সাংস্কৃতিক অভ্যুদয় হল।


সঙ্গম সাহিত্য (Sangam Literature) : 

সঙ্গম সাহিত্য বলতে তামিল সাহিত্যের আদি পর্যায় বা প্রাথমিক স্তর বোঝায়। কবি গোষ্ঠী এই কবিতাগুলি কে প্রাচীন তামিল কবিরা বহুসংখ্যক প্রচার করেছে। সঙ্গম কথাটি এসেছে দ্রাবির শব্দ ভান্ডার থেকে। এর অর্থ গোষ্ঠী, সমাজ, সমিতি।


 প্রথম সঙ্গম (First Sangam) : 

ইরোয়নার লেখা অহপ্পোরুল এর উপর টীকা লিখতে গিয়ে প্রখ্যাত তামিল ভাষ্যকার তিনটি শঙ্গম পরিষদের কথা বলেছেন। তার বর্ণনা থেকে জানা যায়, প্রথম শগম স্থাপিত হয়েছিল প্রাচীন মাদুরাই শহরে। বর্তমানে শহরটির সমুদ্রের বিলীন হয়ে গেছে। এই কবি পরিষদের সভাপতির আসন অলংকৃত করেছেন মহামুনি অগস্ত। ৮৯ জন পান্ডু শঙ্গমের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পৃষ্ঠপোষক রাজাদের মধ্যে ৯ জন কবি ছিলেন।


দ্বিতীয় সঙ্গম (Second Sangam) :

দ্বিতীয় কবি পরিষদের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কপাতপুরম শহরে। বর্তমানে শহরটি সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়ে আছে। ৩৭০০ জন কবির কবিতা এই সভায় অনুমোদিত হয়। ৫৮ জন পান্ডুরাজা এই সভার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।  এই পর্বে রচিত গ্রন্থ গুলির মধ্যে রয়েছে অকত্রিয়ম, ভূতপুরণম, কলি, মাপুরণম। তোলকাপ্পিয়ম গ্রন্থখানি ছাড়া বাকি সব ক'টি গ্রন্থই বিনষ্ট হয়ে গেছে।


 তৃতীয় সঙ্গম (Third Sangam) :

এই সঙ্গম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল উত্তর মাদুরাই শহরের। ৪৯ জন সদস্য বিশিষ্ট এই কবি পরিষদ সমসংখ্যক পান্ডু রাজার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন নককীরর, কপিলর, পরনর, শাওনর। ৫০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শঙ্গম যুগের সমাপ্তি ঘটেছিল। সঙ্গম সভ্যরূপে যাদের নাম উল্লেখ আছে তাদের অনেকেই দেবতা ছিলেন।


             সঙ্গম সাহিত্যের সময় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মহলের বাকবিতণ্ডা আছে। এর প্রকৃত অবয়ব সম্পর্কেও বিতর্কের শেষ নেই। সঙ্গম যুগের শুরু ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ আর সমাপ্তি ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ এরূপ একটি অভিমত প্রচলিত আছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই অষ্টাদশ নীতিমূলক কবিতাগুলোকে সঙ্গম সাহিত্যের অঙ্গ বলে স্বীকার করেন না।

 

বর্ণনামূলক কবিতা দশক : বর্ণনামূলক কবিতার মধ্যে লেখা প্রথম কবিতাটি মোরগের প্রশস্তি। আর একজন কবি বর্ণনামূলক কবিতা লিখেছেন, তিনি উরুত্তিরঙ্গননার। বর্ণনামূলক দশটি কবিতার সাহিত্যিক মূল্য অপরিসীম। প্রকৃতির অনুপম বর্ণনা আছে এই কবিতাগুলোতে। নৃত্যকলা সম্পর্কেও সুন্দর মন্তব্য আছে এতে। অধ্যাপক শ্রীনিবাস মনে করেন কবিতাগুলি খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের রচিত হয়েছিল।


 অষ্ট সংকলন : এই সংকলনের একেকটিতে  আছে কয়েকটি করে ছোট গীতি-কবিত প্রথম সংকলনের নাম নত্রিনৈ। এতে ৪০০ টি ছোট গীতিকবিতা আছে। মিলন, বিচ্ছেদ, প্রতীক্ষা, বিলাপ ও অভিমান প্রেমের এই পাঁচটি রূপকে আশ্রয় করে কবিতাগুলি রচিত হয়েছে। চের রাজাদের শৌর্য-বীর্য ও চারিত্রিক গুণাবলী অবলম্বন করে কবিতাগুলি রচিত হলেও এদের সামাজিক গুরুত্ব কম নয়। এই কবিতাগুলি একদিকে যেমন উন্নতমানের সাহিত্যকীর্তির অভিব্যক্তি ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনি প্রাচীনতম সমাজের চালচিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।


 অষ্টাদশ নীতিমূলক কবিতা গ্রন্থ : অষ্টাদশ নীতি মূলক কবিতা গ্রন্থের প্রথমটির নাম নালদিয়ার। জৈন কবিদের লেখা ৪০০টি চতুষ্পদী কবিতার সংকলন এটি। এই পর্যায়ের কবিতা গুলিতে প্রকাশ পেয়েছে নর-নারীর হৃদয়াবেগ ও তাদের ঘর বাঁধার স্বপ্ন। তামিল ভাষাভাষীদের গৃহে গৃহে আজও এই কাব্যখানি সগ্রহে পাঠিত হয়। এই পর্যায়ের বাকি কবিতা গুলি হল পলমোলি, এলাদি প্রভৃতি। শঙ্গম সাহিত্য সর্ব অর্থেই সর্বজনীন সাহিত্য হয়ে উঠেছে। 


রাজনৈতিক জীবন (Politcal Life) : 

সঙ্গম সাহিত্য তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক জীবনের একটি ছবি পাওয়া যায়। সঙ্গম সাহিত্যে যে সব রাজাদের উল্লেখ আছে বংশ পরিচিতির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় - চের, পান্ড ও চোল।


 চের রাজবংশ (Cher Dynasty) : 

সঙ্গম সাহিত্যের উল্লেখিত রাজাদের মধ্যে যে সবচেয়ে প্রাচীন তার নাম উদয়নজেরাল। কুরুক্ষেত্রে প্রান্তরে তিনি কৌরব ও পাণ্ডবদের ভুরিভোজের আপ্যায়িত করেছিল বলে শঙ্গম সাহিত্যের উল্লেখ আছে। দ্বিতীয় শতকের মধ্যভাগে তিনি কেরল ও সংলগ্ন তামিল ভূখণ্ডে অবস্থিত চের অঞ্চলে রাজত্ব করতেন। তিনি সমুদ্র নিকটবর্তী কদম্বু অঞ্চল অধিকার করেন। কোন কোন কবিতায় তাকে আসমুদ্র হিমাচলের অধীশ্বর রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। বনজি ছিল সে রাজ্যের রাজধানী। পরবর্তীতে আরও দু'জন চের রাজের কথা শোনা যায় এদের একজন পেরুম, অন্যজন ইরুমপোরিই। এদের দুজনের পারস্পারিক সম্পর্ক কি ছিল তা নিয়ে সঙ্গম সাহিত্য সম্পূর্ণ নীরব।


 চোল রাজবংশ (Chol Dynasty) : 

সঙ্গম সাহিত্যে চোল রাজাদের কথা বরাবর উল্লেখিত। পরাক্রম, ব্রাহ্মণধর্মানুরাগী, বৈদিক যাগযজ্ঞের অনুষ্ঠান, দানশীলতা প্রভৃতি গুণের জন্য চোল রাজারা শঙ্গম সাহিত্যের প্রশংসিত হয়েছেন। সঙ্গম যুগের শ্রেষ্ঠ রাজা করিকাল। অগ্নিদগ্ধ যার পা তিনি করিকাল। এই অর্থে অনেকে করিকাল শব্দের ব্যাখ্যা করেছেন। প্রথম জীবনে করিকালকে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বেন্নির যুদ্ধে জয়লাভ তার রাজত্বের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। করিকালের সঙ্গে পান্ডু ও চের রাজার সম্মিলিত বাহিনীর যুদ্ধ হয়। করিকাল শ্রীলংকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। করিকালের সমকালীন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইলন্ডিরয়ন। করিকাল একদিকে যেমন নতুন নতুন অঞ্চল জয় করে রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে নতুন নতুন জনপদ সৃষ্টি করে এবং চাষাবাদের ব্যবস্থা করে রাজ্যের আর্থিক নিবৃত্তি সাধন করেন। 


 পান্ডু রাজবংশ (Pandya Dynasty) : 

সঙ্গম সাহিত্যের কয়েকজন পান্ডুরাজার কার্যকলাপও বর্ণিত হয়েছে। এদের একজন মুদুকুডুমি। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকের একটি লেখেও তার কথা বলা হয়েছে। তিনি পরমেশ্বর অভিধা ধারণ করেছিলেন।তার সিংহাসনে আরোহনের অল্পদিনের মধ্যেই এক শক্তিশালী শত্রুর আক্রমণ করেন। পাণ্ডুরাজ অসীম সাহসিকতার সঙ্গে শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন এবং আক্রমণকারীর পশ্চাদ্ধাবন করে চোল রাজ্যের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। বহু বৈদিক যজ্ঞের অনুষ্ঠানে তিনি করেন। কৌন্ডিন্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ তার পুরোহিত ছিলেন।


 প্রশাসনিক ব্যবস্থা (Adminitrative System) :  

সঙ্গম যুগের রাজতান্ত্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন রাজা। কবিরা বলেছেন রাজা প্রজাদের অভাব-অভিযোগ শুনবেন, অভিযোগে প্রতিকার করবেন তাদের পুত্র স্নেহে পালন করবেন। রাজতন্ত্র তখনকার দিনে স্বৈরাচারী রূপ নেয়। তখনকার দিনে রাজায় রাজায় প্রায়ই যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগে থাকত। প্রতিবেশীরা যাদের পরাজিত করে নিজেদের বিজিগীশূ রুপে প্রতিষ্ঠা করার আদর্শের তারা অনুপ্রাণিত ছিলেন। রাজ শক্তির মূল উৎস যে সৈন্যবাহিনী, যা পেশাদার সেনাদের নিয়ে গঠিত ছিল। সেন সৈন্যবাহিনী চারটি বিভাগ- রথারোহী, গজারোহি, অশ্বারোহী ও পদাতিক। সঙ্গম সাহিত্যের এক ধরনের উৎক্ষেপণ অস্ত্রের উল্লেখ আছে, তাকে বলা হয়েছে তোমরম। সাধারণত প্রশাসনের স্বার্থে রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগে ভাগ করা হতো। রাস্তাঘাট তথা জনসাধারণের নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রশাসনের তৎপরতায় উল্লেখ আছে এই সাহিত্যে। সভা ছিল গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ সংস্থা। এই সভায় যেমন খেলাধুলা ও অবসর বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল তেমনই গ্রাম সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হত। পরবর্তীকালে পরাক্রান্ত পল্লব ও চোল রাজাদের আমলে তামিলনাড়ুতে যে উন্নত স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তার বীজ এই পর্বেই বপন করা হয়।


  সমাজ জীবন (Social Life) :  

বহু জাতির লোক নিয়ে তখনকার দিনের তামিল সমাজ গঠিত হত। কিরাতরা এমনই এক জাতি। এই সময়ে সমাজে পশু শিকার ছিল প্রধান উপজীবিকা। এছাড়াও গোয়ালা, ব্রাহ্মণ, মৎস্যজীবী প্রভ্তির উল্লেখ আছে। দাস প্রথার প্রচলন ছিল। শাস্র অধ্যায়নে ও যাগ যজ্ঞের অনুষ্ঠানেই ব্রাহ্মণরা বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করত। ব্রাহ্মণরা বেদ শাস্ত্রে সুপন্ডিত ছিলেন। রাজার বন্ধু ছিলেন রাজা কে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করেছে, এমন কবিদের কথা ও সঙ্গম সাহিত্যের উল্লেখিত আছে। সঙ্গম সাহিত্যে তামিল দেশের সাংস্কৃতিক জীবনের যে ছবি প্রতিফলিত হয়েছে তা এক সমন্বিত সাংস্কৃতিক জীবনের ছবি। এই সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে দুটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতির মিলন। এটি একটি স্থানীয় তামিল সংস্কৃতি অন্যটি আর্য সংস্কৃতি। শঙ্গম যুগের কবিরা আর্যদের ধর্মবিশ্বাস, দর্শন, পৌরাণিক কাহিনী, রামায়ণ-মহাভারতের কথা, নীতিবোধ ও আচার বিচারের সঙ্গে বিশেষ পরিচিত ছিলেন। এ সময় সংস্কৃত শব্দ অবিকৃত রূপে তামিল শব্দ ভান্ডারে অনুপ্রবিষ্ট হয়।


সঙ্গম যুগের মহিলারা গৃহবন্দী ছিলেন না। গ্রাম সভায় তারা নিয়মিত উপস্থিত হতেন। মহিলাদের অনেকেই স্বামীর মৃত্যুতে স্বামীর প্রচলিত সীতাকুণ্ডে আহত দিয়ে সতী  ধর্ম পালন করতেন। মেয়েদের মধ্যে অনেকেই লেখাপড়া জানতেন। যুদ্ধবন্দী মহিলাদের ক্রীতদাসের জীবন যাপন করতে হতো। শঙ্গম সাহিত্যে বিবাহের পূর্বে আত্মীয়-স্বজনদের ভুরিভোজের আপ্যায়িত করা হতো। বিবাহে সাধারণত অভিভাবকরাই পাত্র পাত্রী নির্বাচন করতেন। সঙ্গম সাহিত্যে তখনকার দিনের লোকাচার সম্পর্কে কিছু তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। তখন লোকদের জ্যোতিষ শাস্ত্রে প্রচন্ড বিশ্বাস ছিল। ফলে জ্যোতিষের উপার্জন বেশ ভালই ছিল। মৃতদেহ সৎকার সম্পর্কে অল্প বিস্তর তথ্য আছে। মৃতদেহ সাধারনত দাহ করা হতো।


 অর্থনৈতিক জীবন (Economy)  :  

সঙ্গম সাহিত্যে তামিলনাড়ুর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটেছিল কৃষিতে, শিল্প ও বাণিজ্যে। কৃষিজ ফসলের মধ্যে ছিল প্রধান ধান। জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানার প্রতিষ্ঠা ছিল। এছাড়াও  ইক্ষু, হলুদ, কাঁঠাল এবং মধু প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হতো। মাছ ও মাংস সহজলভ্য ছিল। এ সময় কার্পস ও রেশম শিল্পে অগ্রগতি দেখা যায়। রোমক পরিবারে এসব বস্ত্রের বিস্তার চাহিদা ছিল। সোনা, রুপা ও বিভিন্ন মণিরত্ন দিয়ে নানা প্রকার অলংকার তৈরি হতো।


  অন্ত্তবাণিজ্যে তৎপরতা লক্ষিত হয় সার্থবাহ দের দল সকল পণ্য সাজিয়ে স্থান থেকে স্থানান্তরে ঘুরে বেড়াতো। জিনিসপত্র ক্রয় বিক্রয় হত নগদে কখনো বা দ্রবের বিনিময়। শুল্ক আদায়ের ভাগ শুল্ক বিভাগের কর্মচারীদের উপর ন্যস্ত ছিল। তখন ধানের বিনিময়ে মাছ পাওয়া যেত, ইক্ষুর পরিবর্তে হরিণ পাওয়া যেত, মধু ও বৃক্ষ মূল দিয়ে মাছের তেল বা তারি কেনা যেত। তামিলনাড়ু তথা দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে রোমক সাম্রাজ্যের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শঙ্গম পর্বে পশ্চিম উপকূলের একটি বন্দর গড়ে উঠেছিল। পেরিপ্লাস গ্রন্থটি থেকে জানা যায় ছোট, মাঝারি, বড় পূর্ব উপকূলে এই তিন প্রকার  জলযানের ব্যবহার ছিল । বিদেশ থেকে আমদানিকৃত দ্রব্যের মধ্যে ছিল মুদ্রা, সুবস্ত্র, কাচ, তামা, টিন, শিলা, পোখরাজ, প্রবাল ইত্যাদি। যেসব জিনিস বিদেশে রপ্তানি করা হতো তাদের মধ্যে ছিল গোলমরিচ, মুক্তা, গজদন্ত, রেশমি বস্ত্র, মলম, মূল্যবান পাথর, নীলকান্তমণি ও তেজপাতা।


তামিলনাড়ুর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর রোমক স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। এই মুদ্রা গুলির মধ্যে যেমন সম্রাট অগাস্টাসের তেমনই টাইবেরিয়াস এবং নিরোর মুদ্রা আছে। মুদ্রার বিশ্লেষণে দেখা যায় খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের চতুর্থ পাদ হতে খ্রিষ্টিয় প্রথম শতকের দ্বিতীয় পাদ পর্যন্ত সময়ে রোম ভারত বাণিজ্য যে ব্যাপকতা দেখা দিয়েছিল খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় তৃতীয় শতকে তাতে মন্দ নেমে আসে। বলাবাহুল্য এই বহির্বাণিজ্যের ভারতে বেশি লাভবান হয়েছিল। এই বাণিজ্য উপলক্ষে দক্ষিণ ভারতে কয়েকটি রোমক বসতি স্থাপিত হয়।


 ধর্মীয় জীবন (Religion) :  

সঙ্গম যুগে তামিলনাড়ুতে বৈদিক ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। রাজা-মহারাজারা প্রায়ই ব্যয়বহুল যাগযজ্ঞের অনুষ্ঠান করতেন। পশু বলি দেওয়া হতো। জনপ্রিয়তায় সুব্রহ্মন্য ছিলেন দেবতাদের শীর্ষে ।এই দেবব্রতা সঙ্গম সাহিত্যের বারবার উল্লিখিত হয়েছেন। বিষ্ণুপুজারো বিশদ বর্ণনা আছে সঙ্গম সাহিত্যে। তখনকার দিনে পূজার্চ্চনার নিত্য গীতের এক বিশেষ ভূমিকা ছিল। সুব্রমন্য ও বিষ্ণুর ছাড়া শিব, বলরাম, কৃষ্ণ ও  অর্ধনারীশ্বরও পুজা হত | লোকদের পুনর্জন্মে বিশ্বাস ছিল। পূর্বজীবনের কর্মফল পরজন্মে বর্তায় ধারনাও তাদের ছিল। শঙ্গম যুগের প্রথম দিকের কবিতা গুলিতে ভোগবাদের আদর্শ প্রচারিত হয়েছে। জীবন যৌবন ধন মান সবাই ক্ষণস্থায়ী মৃত্যুতেই জীবনের পরিসমাপ্তি। ধর্ম শাস্ত্র কার মনুর সেই বিখ্যাত উক্তি যেন এখানে প্রতিধ্বনিত হয়েছে সম্ভোগ নয়, কামনা-বাসনা পরিহারের মধ্যে রয়েছে প্রকৃত সুখ।


👉 মৌর্য সাম্রাজ্যের ইতিহাস

Post a Comment

1 Comments

  1. ধন্যবাদ এই জ্ঞানের জন্য

    ReplyDelete