মুঘল যুগ। Mughal Empire | Medieval Indian History

 The Mughal Empire | Indian History

মুঘল যুগ ও মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস

www.gkghor.in
Medieval Indian History | Mughal Period | The Mughal Empire | Indian History


 মুঘল বংশ (Mughal Dynasty) :

মুঘল বংশের সংস্থাপক ছিলেন বাবর। মুঘলরা ছিল চাক্তাই বংশের অন্তর্গত তুর্কি। কিন্তু ভারতে এদের তৈমুর বলা হয়েছে। চেঙ্গিস খাঁর দ্বিতীয় পুত্রের নাম অনুসারে চাক্তাই শাখার নাম হয়েছে। কিন্তু মোঘলরা নিজেদের তৈমুর বংশগত বলে গর্বিত ছিলেন। তাই তারা নিজেদের তৈমুর বংশীয় বলে মনে করতেন।


মুঘল শাসক গণ (Mughal Rulers) :

  •  বাবর (156-1530)
  •  হুমায়ুন (1530-1556)
  •  আকবর (1556-1605)
  • জাহাঙ্গীর (1605-1627)
  • শাহজাহান (1627-1658)
  • ঔরঙ্গজেব  (1658-1707)


 বাবর (Babur) :

 বাবর এর মূল নাম ছিল জহির উদ্দিন মোহাম্মদ। 14 ই ফেব্রুয়ারি 1483 খ্রিস্টাব্দে মারবা-উন-নহর  অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। 1527 সালে খানুয়ার যুদ্ধ শেষে তিনি গাজী উপাধি ধারণ করে প্রথম মোগল শাসক হিসাবে সিংহাসনে বসেন। বাবর নকশাবন্দী সিলসিলার ওবেদুল্লাহ আহরার শিষ্য ছিলেন। বাবর এশিয়ার প্রথম শাসক ছিলেন যিনি প্রথম গোলাবারুদের ব্যাবহার সফলতা পূর্বক ব্যবহার করেছিলেন। বাবর প্রথম থেকেই তার নিজের পূর্বজ তৈমুর রাজধানী সমর্কন্দ জিততে চেয়েছিলেন। এই জন্য তিনি মোট তিনবার চেষ্টা করেছিলেন। বস্তুত বাবর মধ্য এশিয়ায় কখনোই সফল হতে পারেনি। ১৫০৪ সালে বাবর কাবুল এবং গজনী জিতেছিলেন কিন্তু 1507 সালে কান্দাহার তার হাত ছাড়া হয়ে যায়।


পানিপথের যুদ্ধ (Panipath War) :

পানিপথের প্রথম যুদ্ধ 21 এপ্রিল 1526 খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট বাবর এবং আফগান সুলতান ইব্রাহিম লোদীর মধ্যে হয়েছিল। এই যুদ্ধে বাবর সর্বপ্রথম তুলুগমা বিধি তথা উসমানী বা রুমি বিধির প্রয়োগ করেছিলেন। এটি একটি যুদ্ধ পদ্ধতি যা উজবেগদের কাছ থেকে শিখেছিলেন।


 হুমায়ুন (Humayun) :

 হুমায়ুনের অর্থ হল ভাগ্যবান। 6 ই মার্চ 1508 খ্রিস্টাব্দে কাবুল দুর্গে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার মূল নাম ছিল নাসির উদ্দিন মূহম্মদ। হুমায়ুন সাত্তারি  সিলসিলার মুহাম্মদ গিয়াসের শিষ্য ছিলেন। হুমায়ুন তার প্রথম অভিযান 1531 খ্রিস্টাব্দে কালীনজড়ের শাসক প্রতাপরুদ্র দেবের উপর করেছিলেন। পনেরশো পয়ত্রিশ খ্রিস্টাব্দের গুজরাট এবং মালব্য জয় করা প্রথম বাদশা ছিলেন হুমায়ূন। 1532 খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন শের খাঁ কে দৌরাহার যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন এবং শেরশাহ হুমায়ুনের অধীনতা স্বীকার করে নেয়।


 আকবর (Akbar the Great) :

 আকবরের প্রকৃত নাম ছিল জালাল উদ্দিন। দক্ষিণের বাদশা, অর্শ্ব আশিয়ানী, জগদীশ্বর, ইমাম, আদিল প্রভৃতি ছিল আকবরের উপাধি বা উপনাম। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রসিদ্ধ শাসক হিসাবে আকবরকে মানা হয়ে থাকে। আকবরই সেই প্রথম মোগল শাসক যিনি বেশ বদলে প্রজাদের মধ্যে যেতেন। আকবরের প্রথম জীবনীকার ছিলেন বায়জিদ বয়াত। আকবরের শিক্ষা প্রয়োগের অনেক চেষ্টা করা হলেও তিনি নিরক্ষর ছিলেন।


আকবরের সময় 1556 খ্রিস্টাব্দে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধ মোগল সম্রাট আকবর এবং আফগান সুলতান আদিল শাহ-র মধ্যে হয়েছিল। এই যুদ্ধে আকবরের পক্ষ থেকে বৈরাম খাঁ এবং আদিল শাহর পক্ষ থেকে হিমু যুদ্ধের নেতৃত্ব করেছিল। এই যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী ইতিহাসকারক ছিলেন আরিফ কান্দাহারি। পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের পর 1557 খ্রিস্টাব্দে সিকন্দর সুর আত্মসমর্পণ করে। আকবর তাকে মাফ করে বিহারের জাগির প্রদান করেন। 1557 খ্রিস্টাব্দে আকবর মান কোট জয় করেন  তথা 1558 খ্রিস্টাব্দে আজমের মুঘলরা জিতে নেয়। 1559 খ্রিস্টাব্দে আকবর গোয়ালিয়র জয় করেন। 1560 খ্রিস্টাব্দে জৌনপুর মুঘল সাম্রাজ্য ভুক্ত হয়। 1561 খ্রিস্টাব্দে আসফ খাঁ আফগানদের কাছ থেকে চুনারগড় ছিনিয়ে নেন।


 আকবরের রাজপুত নীতি :

 আকবরের রাজপুত নীতি গাজর এবং ছড়ীর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর ছিল।

  •  এখন থেকে রাজপুতদের বৈদেশিক সম্বন্ধের নির্ধারণ বাদশা করবে।
  •  রাজপুতরা নিজেদের জায়গায় স্বতন্ত্র থাকবে এবং তাদের জন্য যে বতন জাগির তা বন্ঠিত করা হবে।
  •  মুঘল পরিবারে বৈবাহিক সমন্ধ রাখবে কি না তা রাজপুতদের মর্জির ওপর নির্ভর করবে।
  •  রাজপুত শাসকরা নিয়মিত রূপে কর এবং সৈনিক সহায়তা বাদশাকে দিতে বাধ্য থাকবে।


 জাহাঙ্গীর (Jahangir) :

 জাহাঙ্গীর এর প্রকৃত নাম ছিল সেলিম। শেখ সেলিম চিশতির কুঠিতে হরখাবাই এর গর্ভ থেকে সেলিমের জন্ম হয়েছিল। আকবরের মৃত্যুর আট দিন পর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাদশা গাজী নামের উপাধি নিয়ে সেলিম রাজ্যভিষেক করেন। জাহাঙ্গীর কিছু সময় তার নিজের নাম থেকে মুহাম্মদ শব্দ সরিয়ে নুরুদ্দিন যুক্ত করেছিলেন। এই পরিবর্তনের শ্রেষ্ঠত্ব তিনি ভারতীয় মনীষীদের দিয়েছিলেন।


সেলিম ছিলেন আকবরের জ্যেষ্ঠ সন্তান। তার লালন-পালন এবং অধ্যায়ন ফতেপুর সিক্রিতে হয়েছিল। শিক্ষার জন্য সর্বপ্রথম তাকে আব্দুর রহিম খান খানার সংরক্ষণে রাখা হয়েছিল এবং তিনি সেখানে তুর্কি ভাষা শেখেন। সেলিমকে ফারসি ভাষাও শেখানো হয়েছিল। মহত্বপূর্ণ হল যে তিনি তার আত্মকথা তুজুক এ জাহাঙ্গীর ফারসি ভাষাতেই লিখেছিলেন। 1581 খ্রিস্টাব্দে তিনি কাবুলে প্রথম সৈনিক অভিযান করেন। সেলিম ছিলেন আকবরের সময়ে একমাত্র জীবিত পুত্র।


 শাহজাহান (Shahjahan) :

5 ই জানুয়ারি 1592 খ্রিস্টাব্দে লাহোরে শাহজাহান জন্মগ্রহণ করেন। শাহজাহানের মূল নাম ছিল শিহাব উদ্দিন। খুররম ছিল তার উপাধি বা উপনাম যা আকবর দিয়েছিলেন। শাহজাহান নিজেকে ইসলামের রক্ষক বলে স্বয়ং ঘোষণা করেছেন। শাহজাহানের সময়কালকে মোগল সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ (Golden Age) বলা হয়। মহত্বপূর্ণ হল যে শাহজাহান ছিলেন হিন্দু মায়ের গর্ভ থেকে উৎপন্ন সন্তান। কিন্তু তিনি হিন্দু মায়ের গর্ভ থেকে উৎপন্ন হলেও কোনো হিন্দু মহিলাকে বিয়ে করেননি।


শাহজাহান হিন্দুদের মুসলমান বানানোর জন্য পৃথক বিভাগ বানিয়েছিলেন। ইলাহী সম্বত এর স্থানে হিজরী সম্বত চালিয়েছিলেন। শাহজাহান কাশ্মীরের হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিবাহের উপর  প্রতিবন্ধকতা জারি করেন।


 ঔরঙ্গজেব আলমগীর (Aurangazeb) :

1618 খ্রিস্টাব্দে উজ্জয়িনী এর নিকটে দোহদে জন্মগ্রহণ করেন। ওরঙ্গজেবের মূল নাম ছিল মুহিউদ্দিন। আলমগীর ছিল ঔরঙ্গজেব এর উপাধি। সাদা সুসজ্জিত পোশাক এবং মদ্যপান না করার জন্য তাঁকে  ভদ্র পোশাকে একজন দরবেশ বলে মনে করা হতো। ঔরঙ্গজেব ছিলেন ইসলামের আইনের অঙ্গ  রক্ষক এবং ইসলামের আইন গুলিকে তিনি যথাযথভাবে পালন করতেন তাই তাকেই জিন্দাপীর উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ঔরঙ্গজেব ছিলেন প্রথম এবং শেষ বাদশা যিনি সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করেছিলেন। ওরঙ্গজেব এর ছিলেন নকশাবন্দী সিলসিলার মীর মাসুমের শিষ্য। তিনি ছিলেন প্রথম মোগল বাদশাহ যার দুবার রাজ্যভিষেক হয়েছিল।


 ঔরঙ্গজেবের আমলে বিশেষ কয়েকটি দিক হল-  তিনি খাদ্যান্নের উপর থেকে কর সরিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯ দিন ধরে চলা ফারসি উৎসব নওরোজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি মুদ্রাতে কলমা লিখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এর পরিবর্তে মুদ্রার ওপর মীর আব্দুল শাহবাই এর  কবিতা লিখেছিলেন। 1663 খ্রিস্টাব্দে তিনি তীর্থযাত্রা উপর কর আরোপ করেন এবং সতী প্রথা বন্ধ করে দেন। মহত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল যে ঔরঙ্গজেব নিজেই বিনা বাজাতে নিপুন ছিলেন। চিশতী সন্ত কালিমুল্লাহ ঔরঙ্গজেব কে পাখন্ডী বলেছিলেন কারণ তিনি সলতনত এবং ফকিরি এক সাথে মিলিয়েছেন।


👉 আধুনিক ভারতের ইতিহাস

Post a Comment

0 Comments