জৈনধর্মের ইতিহাস | Jainism | Indian History Mcq

 জৈনধর্মের ইতিহাস (Ancient Indian Histor) 


সুপ্রিয় শিক্ষার্থীগন, 

জৈনধর্মের উপর থেকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর। কিন্তু প্রশ্নোত্তর গুলি দেখার আগে আপনারা অবশ্যই জৈনধর্ম এবং মহাবীর স্বামী সম্পর্কে দেখে নিন। আমরা জৈনধর্ম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি, আপনাদের বিভিন্ন পরীক্ষায় তা খুবই উপযোগী হবে। নিচে আমরা জৈন ধর্মের উপর থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর দিয়েছি শুধু মাত্র আপনাদের প্রাকটিস করার জন্য। নিচের প্রশ্নোত্তর গুলি অবশ্যই দেখে নিবেন। 

  

Indian History Mcq   www.gkghor.in
Ancient Indian History | Jainism |  MCQ Question Answer with Explanation | Jainism MCQ In Bengali
                                               

  

জৈন ধর্ম :

জৈন শব্দটি প্রযুক্ত হবার পূর্বে এই ধর্মের অনুসারীরা নির্গ্রন্থ নামে পরিচিত ছিল। জিন থেকে জৈন শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। মহাবীর প্রচারিত ধর্মই পরবর্তী কালে  জৈন ধর্ম নামে পরিচিতি লাভ করে। জৈন সাহিত্যে ২৪ জন তীর্থঙ্কর বা ধর্মগুরুর উল্লেখ পাওয়া যায়।


 পার্শ্বনাথের জীবনী :

 পঞ্চদশ শতকের রচনা ভগবতীসূত্র পার্শ্বচরিত্র গ্রন্থে সবিস্তারে পার্শ্বনাথের জীবন বৃত্তান্ত আলোচিত হয়েছে। তিনি চতুরযাম বিধানের নির্দেশ দিয়েছেন। বিধান গুলি হল- অহিংসা, সুনৃত, অস্তেয় ও অপরিগ্রহ। সাধু সাধ্বীদের শ্বেতবস্ত্র পড়ার স্বপক্ষে বিধান দিয়েছেন পার্শ্বনাথ।


  মহাবীরের জীবনী :

জৈন ধর্মের সর্বশেষ, তথা ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীরের জন্ম হয় ৫৯৯ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। কল্পসূত্র, ভগবতীসূত্র প্রভৃতি গ্রন্থসমূহে মহাবীরের জীবনী বর্ণিত আছে। তার আসল নাম বর্ধমান। তিনি পূর্ববর্তী তীর্থঙ্কর আচার্যদের ধর্মমতকে প্রসারিত করেন। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে মহাবীর পূর্ব ভারতের নানা স্থান ভ্রমণ করেন । সমাজের নানা স্তরের মানুষ জৈন ধর্ম গ্রহণ করেন। বিম্বিসার পুত্র অজাত শত্রু যে মহাবীরের অনুরাগী ছিলেন জৈন সাহিত্যে তার উল্লেখ আছে। মহাবীরের শিষ্যদের মধ্যেই ইন্দ্রভূতী সকলের শ্রেষ্ঠ ছিলেন। আনুমানিক 468 খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়। কথিত আছে তার মৃত্যুর রাতে মল্ল আর লিচছবিরা তার সম্মানে দীপাবলি অনুষ্ঠান করেন।


  জৈনধর্মের মূল তত্ত্ব :

জীব বা আত্মার মুক্তি হল জৈন ধর্মের সার কথা। সম্যক দর্শন, সম্যক জ্ঞান ও সম্যক চরিত্রের অনুশীলনের ফলে কর্মের ক্ষয় হয়। কৈবল্য জ্ঞান তথা মোক্ষ লাভ সন্ন্যাসীদের উদ্দেশ্যে হতে পারে কিন্তু  গৃহীদের নয়। মোক্ষ পেতে হলে গৃহ জীবন থেকে মুক্তি পেতে হবে।  কর্মফল থেকে মুক্তি লাভের জন্য ত্রিরত্ন পালনের আদেশ জৈন ধর্মে দেওয়া হয়েছে। ত্রিরত্ন হল সৎ আচরণ, সৎ বিশ্বাস এবং সৎ জ্ঞান। ত্রিরত্ন অনুসরণ করলে মানুষ সিদ্ধ শিল হয়ে কর্মফল ও জন্মান্তরের হাত থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবে বলে জৈনদের বিশ্বাস।


  সৎবাদ  ও অনেকান্তবাদ :

পরমাত্মা সহিষ্ণুতা জৈন ধর্মের এক বড় বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য সৎবাদ নামে পরিচিত। এই তত্ত্বে একদিকে যেমন জীবের জ্ঞানের আপেক্ষিকতার কথা বলা হয়েছে, তেমনি অপর দিকে অন্য জ্ঞানের সম্ভাবনাও ব্যক্ত হয়েছে।


           সত্যের বহুমুখিতা ও পরমাত্মা সহিষ্ণুতার অভিব্যক্তি ঘটেছে জৈনদের আরেকটি তত্ত্বে, যা হল অনেকান্তবাদ। জ্ঞানীর এই আপেক্ষিকতাকে জৈন শাস্ত্রে কতিপয় দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। জৈন ধর্ম বলছে কোন বস্তুর একটি মাত্র দিক নেই, আছে অনন্ত দিক। একেকটি ধর্ম-দর্শন সত্তের বা বস্তুর এক এক দিক প্রকাশ করেছে কোন মতেই ভ্রান্ত নয় আবার কোন মতেই  পূর্ণাত্মক নয়।


  জৈন সংঘ :

পার্শনাথের আমলে সংঘের প্রতিষ্ঠা হয়, তাকে আরো সুগঠিত ও শক্তিশালী করে মহাবীর। সংঘ ও পরিচালনার ভার মহাবীর তার প্রধান গণধর দের হাতে তুলে দেন। জৈনদের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষদের পৃথক সংগঠন ছিল। জৈন গৃহী ভক্তদের বিশিষ্ট স্থান ছিল সংঘ। জৈন সন্ন্যাসীরা বর্ষার চারটি মাস বিশেষ এক স্থানে বাস করতেন, অন্যান্য সময় পরিব্রাজকের বৃত্তি গ্রহণ করতেন। জৈন  শ্রমন কোন গৃহস্থের বাড়িতে অবস্থান করেন না।  জৈন শ্রমন দের মাছ-মাংস খাওয়া বারণ ছিল।


  জৈন সাহিত্য :

মহাবীর এর উপদেশাবলী সম্ভবত "চতুর্দশপূর্ব" নামে এক গ্রন্থে প্রথম সংকলিত হয়। পরে ভদ্রবাহু টিকা রচনা করেন।" কল্পসূত্র " নামে আরও একখানি গ্রন্থ রচনা করেন।  খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে শ্বেতাম্বর শ্রমনরা গুজরাটের বলভী নগরে সমবেত হয়ে স্থবির দেবাধীগনের নির্দেশনায়  জৈন শাস্ত্র সংকলন করেন। এই  শাস্ত্র জৈন সিদ্ধান্ত নামে পরিচিত। জৈন সিদ্ধান্ত অঙ্গ, উপাঙ্গ, ছেদসূত্র, মূলসূত্র, ইত্যাদি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। এই সকল গ্রন্থ অর্ধ মাগধি ভাষায় রচিত। এই সব গ্রন্থ নিয়ে শ্বেতাম্বর শাস্ত্র।


       দিগম্বর সম্প্রদায় মনে করেন এই শাস্ত্র অবাচীন, অপ্রামাণিক। তাদের বিশ্বাস প্রাচীন শাস্ত্র সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে । তারা কতক গ্রন্থকে শাস্ত্র তুল্য ও প্রামানিক বলে মনে করেন। এই গ্রন্থ গুলি চার ভাগে বিভক্ত প্রথমানুযোগ, করুণানুযোগ, দ্রবানুযোগ এবং চরনানুযোগ। এই গ্রন্থ গুলিকে সাধারণভাবে "চতুর্বেদ" বলে।  মহাবীরের দেহান্তর এর পর তাঁর শিষ্য ইন্দ্রভুতি জৈন সংঘের অধ্যক্ষ হন। জৈনরা মনে করেন ২৪ জন তীর্থঙ্কর ও ১১ জন গনধর এর পর একমাত্র জম্বই কেবল জ্ঞান লাভ করেছিলেন।


  ভারতের বাইরে জৈন ধর্ম প্রসার না হওয়ার কারণ :

 প্রথমত, ধর্ম প্রচার করেন মনিরা উপাসক-উপাসিকারা নন, শাস্ত্রে মুনিদের গমনাগমনের ওপর নানা প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মুনিদের সমুদ্র যাত্রাও নিষিদ্ধ। তাদের তিন নদী পাড়ি দেওয়াও বারণ। এর ফলে মুনিদের পক্ষে বিদেশ গমন অসম্ভব হয়ে পড়ে। জৈন সন্ন্যাসীদের জীবন কঠোরতা ও কৃচ্ছতা সাধন এর জীবন। তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কঠোর অনুশাসনে বাধা কোনরূপ শিথিলতার স্থান সেখানে নেই। বিদেশ থেকে সেসব বিধি-নিষেধ সুষ্ঠুভাবে পালন করা সম্ভব ছিল না ফলে মুনিরা কখনো বিদেশের মাটিতে পদার্পণ করেন নি।



   জৈন ধর্মের জনপ্রিয়তার কারণ :

বৌদ্ধধর্ম আজ ভারতে প্রায় অবলুপ্ত কিন্তু জৈনধর্ম এখনো সজীব। কারণ জৈন ধর্ম কখনও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করেনি, উপরন্তু সে নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অনেক কিছুই আত্মসাৎ করে নিজের পুষ্টি সাধন করেছে। এভাবে জৈনরা ব্রাহ্মণ্যধর্মের কাছ থেকে মন্দির নির্মাণ, মূর্তিপূজা, ব্রাহ্মণ্য দেব-দেবীর পূজা, জাতিভেদ ও পৌরোহিত্য প্রথা গ্রহণ করছেন। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতি সম্প্রীতি ও সদিচ্ছার মনোভাব ও জৈন ধর্ম কে দীর্ঘ জীবন লাভের সাহায্য করেছে।  তাছাড়া জৈন মুনিরা উপাসক-উপাসিকা দের সঙ্গে বরাবরই নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলত। জৈন সন্ন্যাসী তথা সঙর সাধারণ মানুষের চোখ বরাবরই অটুট ছিল । 



👉 বুদ্ধদেব এবং বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস



Post a Comment

0 Comments